Sunday, November 29, 2015

                                           প্রগতিশীল প্রকাশক হত্যার নিন্দা
 
                (পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি/১ নভেম্বর, ২০১৫)
               
সাহসের সাথে সংগঠিত হোন! রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন!
একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণে ব্রতী হোন!

গতকাল, ৩১ অক্টোবর ঢাকায় প্রায় একই সময়ে দু’জন প্রগতিশীল পুস্তক প্রকাশকের উপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী আক্রমণ, জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক দীপনকে হত্যা ও শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক টুটুলসহ তিনজনকে গুরুতর আহত করার বর্বরোচিত ঘটনায় আমরা তীব্র ও নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। দৃশ্যত এটা ধর্মীয় মৌলবাদী তৎপরতা বলেই ধারণা করা যায়।
এ ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতার নিন্দা করাই যথেষ্ট নয়। এর সাথে বিশ্ব ও দেশিয় শাসকশ্রেণির সম্পর্ককেও অবশ্যই উন্মোচন করতে হবে, জনগণের প্রগতি ও মুক্তির বাধাকে সমগ্রভাবে বিরোধিতা করতে হবে এবং মুক্তির উপায় খুঁজতে হবে।
 বিগত এক বছরের কম সময়ে অভিজিত রায়সহ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞান-লেখক ও ব্লগার হত্যার মধ্য দিয়ে এখানে ধর্মীয় মৌলবাদীদের সশস্ত্র তৎপরতার বিকাশ লক্ষ করা যায়। যারা জনগণের মূল শত্রুদের উপর আক্রমণের বদলে জনগণকে হত্যা করার প্রতিক্রিয়াশীল গণবিরোধী অপতৎপরতা চালাচ্ছে। গণবিরোধী রাষ্ট্রযন্ত্র ও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার বুর্জোয়া রাজনীতিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-জামাতকে দমন করে নিজেদের কুক্ষিগত ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আর এ অভিপ্রায়ে এসবের জন্য বিএনপি-জামাতকে দায়ী করার মধ্য দিয়ে প্রকৃত মৌলবাদী সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে রক্ষা করে চলেছে। এভাবে তারা প্রগতিশীল জনগণকে এই ধর্মীয় ফ্যাসিস্টদের আক্রমণের সহজ টার্গেটে পরিণত হতে কার্যত সহায়তা করছে। এদের কাছে ফ্যাসিবাদী আক্রমণের বিচার ও প্রতিকার চাওয়া অর্থহীন। কারণ, এরাও গণশত্রু ও ফ্যাসিস্ট। এদের সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র ও দলীয় কেডার বাহিনী একইভাবে অসংখ্য মানুষকে বিনা বিচারে ও বর্বরভাবে হত্যা করেছে ও করে চলেছে।
দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির লালিত, পালিত ও বর্ধিত হওয়ার এক উর্বর ক্ষেত্র। যা গণশত্রু সাম্রাজ্যবাদের দালাল এখনকার শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকারসহ প্রতিটি সরকার প্রতিপালন ও রক্ষা করে চলেছে।
বৈশ্বিক পরিসরে মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদীরা, যারা হাসিনা সরকারসহ শাসকশ্রেণির প্রভু, তারাই ৮০-দশকে এই মৌলবাদীদেরকে সৃষ্টি করেছিল। তাই বিশ্বজুড়ে চাড়া দেয়া ধর্মীয় মৌলবাদী সশস্ত্র শক্তির সাথে বিশ্ব ও দেশিয় ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া শাসক শ্রেণির রয়েছে প্রকাশ্য ও গোপন সম্পর্ক।
একইসাথে মধ্যযুগীয় সামন্তবাদী আদর্শের জেরে আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও দালাল বুর্জোয়া শ্রেণির সাথে তাদের দ্বন্দ্বও রয়েছে। বৈশ্বিক পরিসরে মার্কিনের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদের তথাকথিত “সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ”-র নামে বিশ্বব্যাপী বিশেষত মুসলিম জনগণের উপর বর্বর যুদ্ধাভিযান এই অপশক্তিকে বিকশিত হতেই ভূমিকা রাখছে। একইভাবে দেশে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের মদদে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনও একে বিকশিত হবার শক্তি যোগাচ্ছে।
একদিকে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষত বর্তমান হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের নির্লজ্জ দালাল শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ, এবং অন্যদিকে সশস্ত্র প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর গণবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল তৎপরতাকে সংগ্রাম করতে হলে বিপ্লবী গণস্বার্থ সম্পন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনগণের নিজেদের সশস্ত্র হতেই হবে। কারণ, একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণ করতে হলে চলমান ব্যবস্থাকে ও তার প্রতিপালকদেরকে সমূলে ও সবলে উচ্ছেদ করা ব্যতীত অন্য কোন পথ নেই।
চলমান রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ ও দালাল শাসকশ্রেণিকে বিরোধিতার নামে ধর্মীয় মৌলবাদে আশ্রয় নেয়া হলো এক বিভ্রান্ত ও পশ্চাদমুখী মধ্যযুগীয় ফ্যাসিবাদী পথ। তেমনি এইসব মৌলবাদকে বিরোধিতার নামে চলমান বিশ্ব ও দেশিয় ব্যবস্থার রক্ষকদের পক্ষাবলম্বন হলো আরো বড় মুর্খতা, গণবিরোধিতা ও প্রগতিবিরোধিতা।
সমাজতন্ত্র-কমিউনিজমের আদর্শ আজ সাময়িকভাবে দুর্বল হয়ে যাবার কারণেই দেশ ও বিশ্ব আজ এই দুর্যোগের সম্মুখীন। যারা আজ বুর্জোয়া গণতন্ত্রের নামে সাম্রাজ্যবাদ ও মুৎসুদ্দি ফ্যাসিবাদের পক্ষে দালালী করছে তাদের প্রতিক্রিয়াশীলতা, প্রতারণা, ভণ্ডামি ও ব্যর্থতা তুলে ধরাটাই এখনকার মূল কর্তব্য। সেজন্য জনগণকে সমাজতন্ত্র-কমিউনিজমের আদর্শে এই ব্যবস্থা উচ্ছেদের বিপ্লবী রাজনীতি ও সংগ্রামে সামিল হতে হবে। তাহলেই ধর্মীয় মৌলবাদী ফ্রাঙ্কেনস্টাইন থেকেও জনগণ মুক্ত হতে পারবেন। নতুবা দেশ ও জনগণকে আফগানিস্তান, সিরিয়ার ভাগ্য বরণ করতে হবে।

রাষ্ট্রীয় ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এবং মধ্যযুগীয় ধর্মীয় মৌলবাদী ফ্যাসিবাদÑ একই মুদ্রার দুই পিঠ।
বুর্জোয়া গণতন্ত্রের মোহ ত্যাগ করুন! সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ ও
দালাল বুর্জোয়া শাসক শ্রেণি ও তার ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রযন্ত্রকে উচ্ছেদ করুন!
সমাজতন্ত্র-কমিউনিজমের বিশ্বব্যবস্থার লক্ষে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের আদর্শকে আঁকড়ে ধরুন!
বিপ্লবী রাজনীতির ভিত্তিতে জনগণকে সশস্ত্র করুন! মাওবাদী গণযুদ্ধ’র পথে এগিয়ে চলুন!

No comments:

Post a Comment