২১-শতককে বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার শতকে পরিণত করুন !
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাস্তব জীবনের এই অর্জনকে ধরে রাখা যায়নি। বিশ্ব যখন নতুন শতাব্দীতে - ২১-শতকে -প্রবেশ করেছে, তখন সমগ্র বিশ্বব্যবস্থা সাম্রাজ্যবাদের অধীনেই ন্যস্ত। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ কমিউনিজমের বিরুদ্ধে সাময়িক জয় পেয়ে বিশ্বকে শোষণ-লুন্ঠন-নিপীড়নের জন্য আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল মার্কিনের নেতৃত্বে একদিকে তারা বিশ্ব জনগণের বিরুদ্ধে অন্যায় যুদ্ধের এক নতুন ঢেউ-এর সূচনা করেছে। অন্যদিকে বিশ্বের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে দরকষাকষি ও বিভাজন পুনরায় বেড়ে চলেছে। বিশেষতঃ সাম্রাজ্যবাদের পালের গোদা মার্কিন নিজেদের গনতন্ত্রের ব্যবস্থাকে মাড়িয়ে ফ্যাসিবাদের দিকে এগুতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এ শতাব্দী কি বিগত শতাব্দীর পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে অন্যায় যুদ্ধ ও ফ্যাসিবাদের যাতাকলে পড়ে মার খাবে ? আর, একদিকে ‘গনতন্ত্র’ নামের তথাকথিত ‘আধুনিক’ মতবাদের প্রতারণা, অন্যদিকে মধ্যযুগীয় ধর্মীয় মতাদর্শের বিক্ষিপ্ত ও বিকৃত সংগ্রামের কোশেশ অসহায়ের মত দেখে চলবে ? নাকি বিশ্ব জনগণ, বিশেষতঃ ইতিহাসের সবচাইতে অগ্রসর বিপ্লবী শ্রেণী হিসেবে বিশ্ব সর্বহারা শ্রেণী এক নতুন আলোকিত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য পুনরায় এগিয়ে আসবেন , এবং শেষ পর্যন্ত তা প্রতিষ্ঠায় সফল হবেন ?
বিগত শতকে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ বার বার মরো মরো অবস্থায় চলে গেছে; কিন্তু এই পতনোন্মুখ সাম্রাজ্যবাদের সম্পূর্ণ পতন ঘটেনি। বরং বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবগুলোকে সাময়িকভাবে পরাজিত করতে পেরে গত শতকের ৮০-দশক থেকে সে গলাবাজী করার স্পর্ধা দেখাচ্ছে যে, কমিউনিজম মৃত।
বিশ্বব্যাপী সাম্র্রাজ্যবাদের দ্বারা নিপীড়িত-শোষিত জনগণের সংগ্রাম, উত্থান ও জাগরণ, এবং সাম্রাজ্যবাদের নিজ সংকটগুলোর প্রেক্ষিতে সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদকারী একটি প্রকৃত বিপ্লবের বিপুল পটেনশিয়াল থাকলেও বিপ্লবী শক্তি এখনো দুর্বল। এ অবস্থায় - ২১-শতকে মালেমা-এর ভূমিকা কী হবে Ñ যে মতবাদ কিনা বিগত শতকে সাম্রাজ্যবাদের একমাত্র সর্বব্যাপী বিরোধী বিপ্লবী মতবাদ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছে। কীভাবে মালেমা এই পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করবে ? এই প্রশ্নটি বিশ্বজুড়ে মালেমা-বাদীদের সামনে উঠে আসতে ও তার উপর বিতর্কের উদ্ভব ঘটাতে বাধ্য। কারণ , বিগত শতকের ৭০-দশকে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের সার্বিক বিপর্যয়ের পর সুদীর্ঘ প্রায় তিন দশক পেরিয়ে গেছে। এবং এর মধ্যে বিশ্ব পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তনও ঘটেছে। মালেমা-বাদীদের দায়িত্ব হলো এ বিতর্ককে ভালভাবে পরিচালিত করা এবং বিপ্লবী শ্রেণীসংগ্রামকে এগিয়ে নেবার মধ্য দিয়ে মালেমা-এর মতবাদকে আরো বিকশিত করে তাকে ২১-শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্পূর্ণ সক্ষম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
এই ধরণের এক সার্বিক বিতর্ক সর্বদাই আমাদের শ্রেণীর যে মতবাদ Ñ মালেমা Ñ তার ভিত্তি মূলে স্পর্শ করে। চলমান বিশ্বব্যবস্থা থেকে মুক্তির জন্য, তাকে উচ্ছেদের জন্য কমিউনিজমের আদর্শকে ২১-শতকে আমরা কীভাবে তুলে ধরবো, এবং কীভাবে তাকে বিকশিত করবো Ñ সেটা এ আলোচনা, গবেষণা ও বিতর্কে চলে আসতে বাধ্য। যা কিনা অনিবার্য্যভাবে কমিউনিজমের মতবাদের কার্যকারিতার প্রশ্নের সাথেই জড়িত।
কমিউনিজমের আদর্শের বিপরীতে বৈশ্বিক যে ‘আধুনিক’ মতাদর্শটিকে তুলে ধরা হয় তাহলো ‘গনতন্ত্র’-র মতবাদ। গনতন্ত্র সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর মোহ আকাশছোয়া - এটা সত্য। যা কিনা বিকশিত হতে পেরেছে বিগত শতকে এ আন্দোলনের বিপর্যয়ের পরবর্তী প্রতিকুল পরিস্থিতিতে। কিন্তু এটাও সত্য যে, মার্কসবাদ এ বিভ্রান্তিকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে উন্মেচন করেছে তার উদ্ভবের যুগেই, এবং বিগত শতক জুড়ে তা সফলভাবে করা হয়েছে। তদুপরি বিপ্লব যখন ব্যর্থ হয় তখন দানবেরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে; সেই সাথে বেড়ে চলে বিভ্রান্তি। আমরা এখনো সে সময়টা পেরিয়ে যাইনি। সুতরাং ‘গনতন্ত্র’-র মতবাদের বিপরীতে কমিউনিজমের মতবাদকে পুনরায় বোঝার প্রয়োজন রয়ে গেছে। এবং ২১-শতকে মালেমা-এর যাবতীয় ভূমিকার মাঝে এটা হলো এক প্রধানতম কাজ।
মার্কসবাদ তার সূচনাতেই শিখিয়েছে যে, গনতন্ত্র কোন সার্বজনীন বিষয় নয়, বরং শ্রেণী বিভক্ত সকল সমাজে তা নির্দ্দিষ্ট শ্রেণীর মধ্যেই শুধু প্রযোজ্য। বিপরীত শ্রেণীর উপর একনায়কত্ব ছাড়া কোন শ্রেণীর জন্য গনতন্ত্র হতে পারে না, যেমন সর্বহারা শ্রেণীর উপর একনায়কত্ব ছাড়া বুর্জোয়া গনতন্ত্র হয় না, এবং বুর্জোয়া শ্রেণীর উপর একনায়কত্ব চালানো ছাড়া সর্বহারা শ্রেণীর গনতন্ত্র হয় না। যখন একনায়কত্বের প্রয়োজন পড়বে না, বিশ্ব এক শ্রেণীহীন সমাজ কমিউনিজমে প্রবেশ করবে, তখন গনতন্ত্রের কথা বলাটাও হবে অর্থহীন। তাই, ক্ষমতার, কাজে কাজেই রাষ্ট্রের মূল প্রশ্নটা হলো একনায়কত্বের প্রশ্ন; কোন শ্রেণীর একনায়কত্ব বিপরীত কোন শ্রেণীর উপর। কমিউনিস্ট মতাদর্শের এই মৌলিক ভিত্তিকে আমরা কীভাবে এগিয়ে নেবো সে প্রশ্নটা মতবাদিক বিকাশের জগতে এসে হানা দিতে বাধ্য। বিশ্বে যখন পুনরায় সর্বহারা শ্রেণীর রাষ্ট্র গড়ে ওঠার উজ্জল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তখন এ প্রশ্নটি সর্বহারা শ্রেণী ও মালেমা-বাদীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য হয়ে উঠবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের এই নিবন্ধেও আমরা এ বিষয়টিতেই কেন্দ্রীভূত করবো।
গনতন্ত্র ধারণাটি বাস্তবে আধুনিক বিশ্বের নয়, বরং সুদূর অতীতে দাস আমলে এর উদ্ভব ঘটেছিল। অবশ্য বুর্জোয়া যুগে এসে এ ধারণা উচ্চতর অর্থ ও রূপ পেয়েছে। প্রাচীন রোম ও গ্রীসের দাস আমলে তৎকালীন শাসক শ্রেণী দাসমালিকরা তাদের শাসনব্যবস্থায় গনতন্ত্র চর্চা করতো। আজকের বুর্জোয়া গনতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান “সংসদ” দাস সমাজে সিনেটের অনুশীলন থেকেই এসেছে। এতে দাসদের অংশগ্রহণ দূরের কথা, তাদেরকে মনুষ্য প্রজাতির অংশ বলেও ভালভাবে স্বীকার করা হতো না।
বুর্জোয়া গনতন্ত্রও সারবস্তুগতভাবে একই জিনিষ। আধুনিক শোষক শ্রেণীর ক্ষমতা চালানোর একটি আধুনিক উপায় ছাড়া বুর্জোয়া গনতন্ত্র অন্য কিছু নয়। অবশ্য সার্বজনীন ভোটাধিকার আজকের যুগে বুর্জোয়া গনতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু শুরুতে বহু জায়গাতে গনতন্ত্রে এটা ছিল খুবই খন্ডিত। এমনকি সমাজের অর্ধেক নারীদের ভোটাধিকারও বুর্জোয়া গনতন্ত্রে এসেছে অনেক পরে Ñ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে।
সুতরাং, প্রথমেই যা সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সেটা হলো , চলমান বিশ্বে আধুনিক গনতন্ত্র বলতে যা বোঝায় তা হলো বুর্জোয়া গনতন্ত্র। আর এর প্রকৃত অর্থ তখনই পরিস্কার হয় যখন বুর্জোয়া একনায়কত্ব হিসেবে এর চরিত্রকে উপলব্ধি করা হয় ও উন্মোচন করা হয়। শ্রমিকশ্রেণী ও জনগণের উপর একনায়কত্ব চালানো ছাড়া বুর্জোয়া গনতন্ত্র জিনিষটাই হতে পারে না।
এই বুর্জোয়া একনায়কত্বের বিপরীতে কমিউনিজমের মতাদর্শ সর্বহারা শ্রেণীর একনায়কত্বের রাজনীতিকে তুলে ধরে। এই একনায়কত্বের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ইতিহাসে এই প্রথম এটা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের একনায়কত্ব - সংখ্যালঘুর উপর - যা ইতিপূর্বে ছিল বিপরীত। এবং এই একনায়কত্ব মানবজাতিকে শ্রেণীহীন সমাজে এগিয়ে নেয়া, অর্থাৎ সব ধরণের শ্রেণী একনায়কত্ব, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ক্ষমতার বিলুপ্তির পথে একটি ব্রীজ মাত্র। সুতরাং বিশ্বব্যাপী শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মতবাদ কমিউনিজমের মতাদর্শে সজ্জিত না হলে সর্বহারা একনায়কত্ব হয় না, যেমন কিনা সর্বহারা একনায়কত্ব ব্যতীত কমিউনিজমের মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
২১-শতকে আমাদের এই কমিউনিস্ট মতবাদকে অনেক বেশী জোরালোভাবে তুলে ধরা জরুরী। এবং গনতন্ত্রের বুর্জোয়া মতবাদকে আরো বেশী উন্মোচন করা প্রয়োজন। কিন্তু প্রশ্নটা হলো এই যে, একনায়কত্ব ও গনতন্ত্র - এ দুইকে যখন বিপরীতধর্মী ও পৃথক দুটো বিষয় হিসেবে দেখানো হয়, তখনকি বুর্জোয়া শ্রেণীই নিজেকে প্রকৃত গণতান্ত্রিক হিসেবে দেখাবার সুযোগ পায় না? যখন কিনা বাস্তবে সর্বহারা একনায়কত্বে সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের জন্য গনতন্ত্র অনেক বেশী ব্যাপক ? আমরা-কি ‘সর্বহারা গনতন্ত্র’ দ্বারাই ‘বুর্জোয়া গনতন্ত্র’ -কে সংগ্রাম করতে পারি না? এবং সেটাই কি নীতিগত ও কৌশলগতভাবে বেশী সঠিক হয় না ?
প্রথমতঃ সর্বহারা গনতন্ত্র যে অনেক বেশী ব্যাপক এক গনতন্ত্র তা আমরা তুলে ধরতে নিশ্চয়ই পারি, এবং সেটা অবশ্যই আমরা করবো। আমরা অবশ্যই দেখাবো যে, বুর্জোয়া গনতন্ত্র কীভাবে ১০% মানুষের স্বার্থকে রক্ষা করে ও মূলতঃ তাদের ক্ষমতাকেই পরিচালনা করে। আর বিপরীতে সমাজতন্ত্র প্রতিনিধিত্ব করে ৯০%-কে। কিন্তু মতবাদিক ক্ষেত্রে গনতন্ত্র-সম্পর্কিত বুর্জোয়া ব্যাখ্যা - গনতন্ত্র সার্বজনীন Ñ তাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে উন্মোচন না করলে ক্ষমতা, রাষ্ট্র ও ‘গনতন্ত্র’ সম্পর্কিত আমাদের তত্ত্বকে আমরা চুড়ান্ত অর্থে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি না। এবং জনগণের বিভ্রান্তি ও মোহকে কাটিয়ে তাদেরকে নিজেদের ক্ষমতা দখল ও তা প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত করতে পারি না। আমাদের ব্যাপক ও প্রকৃত গনতন্ত্র দিয়ে তাদের সংকীর্ণ ও বোগাস গনতন্ত্রকে বিরোধিতা করায় সীমাবদ্ধ থাকা, অথবা শত্র“র অস্ত্রে শত্র“কে ঘায়েল করার ‘কৌশল’ এক্ষেত্রে বিতর্কের মর্মবস্তুতে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। যা হলো Ñ গনতন্ত্র হলো একনায়কত্বেরই একটা দিক মাত্র। এর বিপজ্জনক রাজনৈতিক দিকটা হলো সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণ বুর্জোয়া শ্রেণীর উপর নিজেদের একনায়কত্ব প্রয়োগ সম্পর্কে কম সচেতন হয়ে পড়বেন এবং ফলে তা ব্যর্থ হবে।
তাই, মূল বিষয়টা হলো সর্বহারা একনায়কত্বের বিপরীতে ‘গনতন্ত্র’-র শ্লোগান তোলা নয়, বরং এই একনায়কত্বটা কীভাবে আরো ভালভাবে পরিচালনা করা যায় সে বিষয়। এরই অঙ্গাঙ্গী দিক হলো সর্বহারা শ্রেণী ও জনগণের নিজেদের মধ্যে গনতন্ত্র কীভাবে আরো ভালভাবে অনুশীলন করা যায় এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটি। এ দুটো হলো একটি ব্যবস্থার দুটো দিক, এবং এ দুয়েরই নিজ নিজ বিশিষ্ট সমস্যা নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু শ্রেণী বিভক্ত সমাজে, এবং সমাজতন্ত্রেও একনায়কত্বের সমস্যাটিই হলো ক্ষমতার সারবস্তু। সেজন্যই ফ্যাসিবাদ ও বুর্জোয়া গনতন্ত্র সারবস্তুতে একই Ñ বুর্জোয়া একনায়কত্ব Ñ যদিও এ দুয়ের মাঝে শাসন পদ্ধতিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যও রয়েছে। আর সমাজতন্ত্রে এটা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, নবীন সমাজতন্ত্রকে সাম্রাজ্যবাদী সমগ্র বিশ্বব্যবস্থার শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে ও এগিয়ে চলতে হয়; এবং সমাজতন্ত্র নিজে একটা উৎক্রমণকাল বিধায় এখানে অর্থনীতি-রাজনীতি-সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে অসংখ্য বুর্জোয়া সম্পর্ক বজায় থাকে যা থেকে প্রতিনিয়ত নতুন বুর্জোয়ার সৃষ্টি হয়। তাই, একনায়কত্বের প্রশ্নটা সমাজতন্ত্রে পুজিবাদী সমাজের চেয়ে বহু বহু গুণ বেশী গুরুত্বপূর্ণ, এবং তাকে সেভাবে না দেখলে পরাজয় ঘটতে বাধ্য।
২১-শতকে এসে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে যা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে বাধ্য, এবং ইতিমধ্যেই তা উঠেছে, তাহলো, বিগত শতকে সমাজতন্ত্র, তথা সর্বহারা একনায়কত্বের থেকে অভিজ্ঞতার সারসংকলনের বিষয়টি। এই বিপ্লবগুলো কিছুদুর এগিয়ে পরে পরাজিত হয়েছে। সমাজতন্ত্রের বিশ্বব্যাপী শত্র“ প্রবল ছিল নিশ্চয়ই, কিন্তু এ পরাজয়ে আমাদের নিজেদের ভুল-ভ্রান্তির সারসংকলন করারও ভীষণ গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু এ সারসংকলন করতে হবে মৌলিক মতবাদিক ভিত্তিতে দাড়িয়ে, তারই সাহায্যে, এবং এর মধ্য দিয়েই আবার মতবাদের বিকাশ ঘটাতে হবে। বুর্জোয়া মতবাদের সাথে সমন্বয়সাধনে আমাদের মতাদর্শের বিকাশ ঘটে না, বরং তাতে এর মাঝে অনিরাময়যোগ্য ক্ষতের জন্ম হয়, যা উপযুক্ত শর্তে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই, সর্বপ্রথম এ ব্যাপারেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
২১-শতক মানবজাতির ইতিহাসে এক অতিগুরুত্বপূর্ণ সময় হয়ে উঠবে। সাম্রাজ্যবাদ বিগত এক শতাব্দী ধরে টিকে থাকলেও শুরু থেকেই সে সংকটের মধ্য দিয়ে আগাচ্ছে। কমিউনিজমের বিরুদ্ধে সে সাময়িক জয় পেলেও নিজ কর্মতৎপরতা দ্বারা সে তার নিজ কবর খুড়ে চলেছে। এ শতাব্দীর শুরু থেকে তার ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ বিশ্বব্যাপী জনগণকে তার বিরোধী করে তুলেছে। এ ছাড়া বিশ্বায়ন ও নিজ দেশে ফ্যাসিবাদের দিকে যাত্রার মত বিশ্বজনগনবিরোধী কর্মসূচী ও পলিসি তার চরিত্র দিন দিন উন্মোচিত করে চলেছে। সাম্রাজ্যবাদ তার নিজস্ব নিয়মেই এক নতুন আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধেও নামতে পারে। এবং তা হবে তাদের জন্য বিগত শতাব্দীর ফলাফলের চেয়েও বেশী মারাত্মক। বিশ্বজনগনের সচেতনতা, অন্যায় যুদ্ধবিরোধী মনোভাব, তথ্য প্রবাহের গতি ও ব্যাপকতা, এবং প্রযুক্তি - সবই তাদের ধ্বংসকে বিপুলভাবে ত্বরান্বিত করবে।
এ পরিস্থিতিতে বিপ্লবী রাজনীতি ও কমিউনিজমের মতবাদের প্রসার বৈশ্বিক পরিসরে এখনো দুর্বল হলেও নেপাল-ভারত-ফিলিপিন-পেরুর গনযুদ্ধ, তুরস্ক-ইরান-আফগান-বাংলাদেশ-ভূটানে সম্ভাব্য গনযুদ্ধের পদধ্বনি, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাওবাদী আন্দোলনের বিকাশ এই বিশ্ব পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করছে। এভাবে একটা নতুন বিপ্লবী ঢেউ-এর আগমন বার্তা শোনা যাচ্ছে যার শীর্ষদেশ ইতিমধ্যেই দৃষ্টিগোচর হয়ে উঠেছে নেপালসহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে।
এ অবস্থায় ২১-শতকে বিশ্ব পরিস্থিতিতে বিপুল পরিবর্তনকারী ঘটনা ঘটবে অতি দ্রুত লয়ে। এ শতকের প্রথম পাচ বছরেই তার প্রচুর আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসবের গতি আরো বৃদ্ধি পাবে। চিন্তার জগত ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মানবজাতির আজকের বিকাশ বিশ্বজুড়ে এমন কদর্য ও জঘন্য এক ব্যবস্থাকে সুদীর্ঘদিন বয়ে চলতে পারে না। ২১-শতকের প্রথমার্ধ জুড়েই বিশ্বব্যাপী অনেক অনেক গনযুদ্ধ গড়ে উঠবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিপর্যয় ও পতন সত্ত্বেও অনেক গনযুদ্ধ জয়লাভ করবে এবং বহু দেশে তা সমাজতন্ত্র গড়ে তুলবে। কিছু কিছু সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় ও পুজিবাদের পুনরুত্থান সত্ত্বেও অনেক সমাজতন্ত্র এগিয়ে যাবে বিশ্বব্যাপী কমিউনিজমের লক্ষ্যকে সামনে রেখে। বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম প্রতিষ্ঠাই হবে ২১-শতকের ভাগ্য। অন্ততঃ এ লক্ষেই বিশ্ব সর্বহারা শ্রেণীকে আজ এগিয়ে চলতে হবে। তাই, এ শতকে কমিউনিজমের শ্লোগান তুলতে হবে বিগত দেড় শতাব্দীর চেয়ে অনেক জোরালোভাবে, এবং অনেক বেশী করে বৈশ্বিক ধরণে। আর সেজন্য এ শতাব্দীতে মালেমা-কেই ভিত্তি করতে হবে, তাকে সুদৃঢ়ভাবে রক্ষা করতে হবে।
* আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, খোদ সর্বহারা একনায়কত্বের অতীত অভিজ্ঞতার সারসংকলন অবশ্যই প্রয়োজন Ñ যখন কিনা পৃথিবীর একটি দেশ নেপালে সর্বহারা শ্রেণী ক্ষমতা দখলের স্বপ্নকে পুনরায় বাস্তবে রূপ দেবার কাছাকাছি পৌছে গেছে। শুধু তাই নয়, বিশাল ভারতের অনেকগুলো রাজ্য এবং পার্শ্ববর্তী ভূটান-বাংলাদেশসহ প্রায় অর্ধশত কোটি জনগন অধ্যুষিত বিশাল এক অঞ্চলব্যাপী বিপ্লবের সম্ভাবনা জেগে উঠেছে, তখন সর্বহারা একনায়কত্বের প্রশ্নটিকে অবশ্যই জোরালোভাবে হাতে নিতে হবে।
স্ট্যালিনের রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র নির্মাণে বিরাট ও মহান অগ্রগতি ঘটলেও মৌলিক মতাদর্শিক ও রাজনীতিক ভ্রান্তিও সেখানে ঘটেছিল। পরে মাও এ ত্র“টিকে সংশোধন করেন। তিনি চীনে জিপিসিআর চালিয়েছিলেন । এবং সর্বহারা একনায়কত্ব পরিচালনায় নতুন ও উচ্চতর অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছিল যা আমাদের তত্ত্বকে বিপুল মাত্রায় সমৃদ্ধ করে তাকে মালেমা-এ উন্নীত করেছিল।
বিশ্ব সর্বহারা শ্রেণীকে প্রায় তিন যুগ পরে সম্ভাব্য নতুন সমাজতন্ত্রে শুধু উপরোক্ত অতীত অভিজ্ঞতায় ঠেকে থাকলে চলবে না, বরং তাকে ছাড়িয়ে যেতে হবে। বিশেষতঃ চীনের পরাজয়ের অভিজ্ঞতাকে মনোযোগ দিয়ে ও গুরুতরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কীভাবে আরো ভালভাবে এই একনায়কত্বকে পরিচালনা করা যায় Ñ তাকে একটা মৌলিক সমস্যা হিসেবেই নিতে হবে। আর এক্ষেত্রে সিরিয়াস পার্টি ও নেতৃত্বগণ ইতিমধ্যে মনোযোগ দিচ্ছেন যাকে বিকশিত করা প্রয়োজন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে একটি উচ্চতর সংশ্লেষণে উন্নীত হওয়া প্রয়োজন।
সমাজতন্ত্রের রাষ্ট্র শুকিয়ে যাবে Ñ এর অর্থটা এটা নয় যে, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও একনায়কত্বকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে তাকে শুকিয়ে ফেলা যাবে। এতে ফল হবে বিপরীত। দুর্বল সর্বহারা একনায়কত্বকে সহজেই বুর্জোয়া শ্রেণী (পার্টির ভেতরের, দেশের ভেতরের ও আন্তর্জাতিক পরিসরের বুর্জোয়ারা) উচ্ছেদ করে দিতে সক্ষম হবে, এবং দুর্বল নয় , বরং অতীব শক্তিশালী বুর্জোয়া একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। সর্বহারা একনায়কত্ব ও রাষ্ট্র Ñ আজকের বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অনেকটা সময় ধরে রননৈতিক আত্মরক্ষার স্তরেই থাকতে বাধ্য Ñ যদি আমরা বিশ্ববিপ্লবের প্রক্রিয়াকে মাও-বর্ণিত গনযুদ্ধের তিনটি স্তরের মত করে বিভক্ত করতে চাই। বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ভবিষ্যতের সমাজতান্ত্রিক শিবির ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা রননৈতিক ভারসাম্য ছাড়িয়ে যখন রননৈতিক আক্রমনের স্তরে অনেকটা এগিয়ে যাবে, এবং সুনিশ্চিতভাবে বিশ্বব্যাপী কমিউনিজমের আশু কর্মসূচীকে হাতে নিয়ে এগুবে, বাস্তবে তখনই শুধু বিশ্বব্যাপী একনায়কত্ব ও রাষ্ট্রগুলোর শুকিয়ে পড়ার প্রশ্ন সামনে আসবে। রাষ্ট্র শুকিয়ে মরা অর্থ হলো শ্রেণীহীন সমাজ তথা কমিউনিজমে প্রবেশ করা Ñ যে সমাজে সমগ্র মানবজাতি প্রবেশ করবে, নতুবা কেউই করবে না। সেটা হবে বিশ্ববিপ্লবের এক ভিন্ন স্তর। যে সম্বন্ধে এখনি আমরা খুব ভালভাবে সবকিছু নির্ধারণ করে দিতে পারি না।
সেজন্য সমাজতন্ত্রে, অর্থাৎ, সর্বহারা একনায়কত্ব ও সর্বহারা রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করেই শুধু সমাজতান্ত্রিক সমাজে পুজিবাদের পুনরুত্থানকে ঠেকানো সম্ভব, বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রকে রক্ষা করে বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট মিশনকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব।
কিন্তু সর্বহারা রাষ্ট্র ও সর্বহারা একনায়কত্ব শুধু তার শ্রেণী চরিত্রে/স্বার্থে বুর্জোয়ার বিপরীত তাই নয়, রূপ ও পদ্ধতির ক্ষেত্রেও একে মূলতঃ বুর্জোয়া রাষ্ট্রের থেকে ভিন্ন হতে হবে , এবং সেটা তা হতেও বাধ্য। তাই, সর্বহারা একনায়কত্ব ও রাষ্ট্র শক্তিশালী করার অর্থ সরলরৈখিকভাবে বুর্জোয়া রাষ্ট্রের মত আমলাতন্ত্র ও গনবিচ্ছিন্নভাবে স্থায়ী সেনাবাহিনীকে শক্তিশালীকরন বোঝায় না। স্ট্যালিনীয় রাশিয়ায় এ ধরণের বিচ্যুতি সর্বহারা একনায়কত্বকে শক্তিশালী না করে বরং দুর্বল করেছিল Ñ কারন বুর্জোয়া সম্পর্কগুলোই এতে জোরালো হয়ে উঠেছিল। সুতরাং কীভাবে সর্বহারা একনায়কত্বকে শক্তিশালী করা যায় Ñ তার সর্বহারা চরিত্রের সাথে ও কমিউনিস্ট মিশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, সেটা একটা বড় গবেষণা, আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়। মাও-এর নেতৃত্বে চীনা সর্বহারা শ্রেণী জিপিসিআর-কালে এক্ষেত্রে অনেক ‘সমাজতান্ত্রিক নতুন জিনিষ’-কে গড়ে তুলেছিল। এসবকে বিকশিত করতে হবে। এবং ধাপে ধাপে এসবকে তত্ত্বায়িতও করতে হবে। এ ভাবেই শুধু আমাদের মতবাদের আরো বিকাশ ঘটতে পারে।
সুতরাং সর্বহারা শ্রেণী ও মালেমা-বাদীদেরকে ২১-শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য অবশ্যই সর্বহারা একনায়কত্বের তত্ত্বকে বিকশিত করার দায়িত্ব সাহসের সাথে হাতে নিতে হবে।
* মালেমা-বাদীদের সামনে আরো বেশকিছু মৌলিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রশ্ন ও বিতর্ক উত্থাপিত হয়েছে যে সবের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা এ নিবন্ধের লক্ষ্য নয়। তবে সে বিষয়গুলোর সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন করা যেতে পারে।
সাম্রাজ্যবাদের গতি বিষয়ে আলোচনা এ ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় সর্বহারা বিপ্লবে নিয়োজিত। তাই সাম্রাজ্যবাদের নিয়মবিধিকে ভালভাবে উদ্ঘাটন ও আত্মস্থ করার উপর এ বিপ্লবের সাফল্য নির্ভরশীল। মহান লেনিন শতবর্ষ আগে সাম্রাজ্যবাদ সংক্রান্ত মার্কসবাদী তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু বিগত প্রায় একশ’ বছরে সাম্রাজ্যবাদের নিয়ম ও গতি সম্পর্কে প্রভূত অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে যার সঠিক সারসংকলন হওয়া প্রয়োজন। মাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মূল্যায়ন অবশ্যই করেছেন। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের নিয়মকে আরো ভালভাবে বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। এর সাথে সাম্রাজ্যবাদের সংকট, বিপ্লবী পরিস্থিতি, বিশ্ব পরিসরে প্রধান দ্বন্দ্ব, ৩য় বিশ্বে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন, বিপ্লবের রননীতি, পাশাপাশি একসারি দেশে বিপ্লবী সোভিয়েত গঠন, শত্র“র দ্বন্দ্ব ব্যবহারে কৌশলগত লাইনের বিকাশ - ইত্যাদি এক সারি গুরুতর রাজনৈতিক লাইনগত সমস্যা জড়িত। এক দেশে বিপ্লব ও সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদ - এ দুয়ের দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার বিষয়ও এর সাথে যুক্ত। এ বিষয়গুলোতে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিভিন্ন মত রয়েছে। এই মতভিন্নতাকে মীমাংসার জন্য ২১-শতকে মালেমা-কে অবশ্যই বিকশিত করতে হবে। আর এজন্য মালেমা-বাদীদের মধ্যকার বিতর্ককে এগিয়ে নিতে হবে।
মাওবাদীদের এই অভ্যন্তরীন সংগ্রামকে পরিচালনা করতে হবে সুস্থভাবে। কারণ অসুস্থ বিতর্ক ও সংগ্রাম চূড়ান্তভাবে শত্রুকেই সাহায্য করে। আমরা এখনি বলতে পারি না ২১-শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের মালেমা-বাদী মতাদর্শকে তার বিকাশের চতুর্থ স্তরে উন্নয়ন অপরিহার্য্য কিনা। কিন্তু কিছু মৌলিক প্রশ্ন ও বিতর্ক ইতিমধ্যে চলে এসেছে যা কিনা বিকাশমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে অনিবার্যভাবে প্রকৃত মালেমা-বাদীদেরকে মোকাবেলা করতে হবে তার মতবাদের বিকাশের দ্বারা, নিছক তার অতীত অভিজ্ঞতা ও তত্ত্বাবলীর গোড়ামীবাদী সমর্থন দ্বারা নয়। তবে এক্ষেত্রে কিছু বিষয়কে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা উচিত। যেমন Ñ বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার আদর্শের আন্তর্জাতিকতাবাদী চরিত্র - যার থেকে উদ্ভূত হয় যে, এ মতাদর্শ শুধুমাত্র বৈশ্বিক পরিসরেই বিকশিত হতে পারে।
মালেমা-কে ২১-শতকে তার চতুর্থ, পঞ্চম ---- এভাবে নতুন নতুন উচ্চতর স্তরে বিকশিত করার বিষয়কে তত্ত্বগতভাবে বিরোধিতা করা যায় না। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আজকের অনেক বিকশিত ‘বিশ্বায়ন’-এর যুগে এ বিকাশ ঘটতে পারে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মাওবাদী বিপ্লবীদের সম্মিলিত প্রয়াসে। বিশ্বের বিভিন্ন বিপ্লব এক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম/পারে Ñ যাকে বিশ্বজুড়ে মাওবাদীরা আত্মীকরণ ও সংশ্লেষণ করে মতবাদকে উচ্চতর স্তরে এগিয়ে নিতে পারেন। এ বিষয়টি এখন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, বিশ্ব মাওবাদীদের একটি ঐক্যকেন্দ্র রিম রয়েছে। যা একটি নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক গঠনের কাজকে এগিয়ে নিচ্ছে। তাই, ভবিষ্যতে আমরা আমাদের মতাদর্শকে কী নামে ডাকবো সে প্রশ্নটিও উঠে আসতে পারে এক বাস্তব সমস্যা আকারে। সেটা অবশ্য আরো ভবিষ্যতেরই সমস্যা। কিন্তু বর্তমানে প্রয়োজন হলো গবেষণা, আলোচনা ও বিতর্কের মৌলিক বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা ও বিপ্লবী সংগ্রামকে ভিত্তি করে ও সুস্থ বিতর্ককে বিকশিত করে আমাদের রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক লাইনকে বিকশিত করে তোলা। আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণী তার মূল্যবান বৈশ্বিক সংগঠন রিম-এর নেতৃত্বে এ পথে নিজেকে বিকশিত করতে সক্ষম হবে এটাই আমরা আশাকরি। এক ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ ও মানবজাতির ইতিহাসের আমূল রূপান্তরকারী ২১-শতকে মালেমা-কে এভাবেই কার্যকর ও ফলপ্রসূ করা সম্ভব হবে, এবং এক নতুন জগতে সমগ্র মানবজাতি প্রবেশ করতে পারবে Ñ এমন আশা আমরা করতে পারি। যখন কিনা শোষনহীন শ্রেণীহীন এক কমিউনিস্ট বিশ্বে গুণগতভাবে নতুনতর সংগ্রামের যুগে মানবজাতি সগর্বে প্রবেশ করবে এবং প্রকৃত সভ্যতা ও আধুনিক জীবনের সূূত্রপাত করবে।
-সেপ্টেম্বর/০৫
নোট ঃ
উপরোক্ত নিবন্ধটি জার্নাল/৩২নং-এ প্রকাশের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত আনব্যু সার্কুলার থেকে বিস্তারিত জানা যাবে।
-লেখক।
No comments:
Post a Comment